আজ শুক্রবার ২১শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ, ৪ঠা মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম:
ময়মনসিংহ সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে আশরাফ তুঙ্গে ওমরা হজ্জে নেয়ার প্রলোভনে,প্রতারনা ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে গ্রেপ্তার ২ তারাকান্দায় দু’মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত-১ মে দিবসে গৌরীপুরে ডেকোরেটর কারিগর শ্রমিক ইউনিয়নের বর্ণিল শোভাযাত্রা মহান মে দিবসে রাজ ওস্তাগার নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে গৌরীপুরে বর্ণিল শোভাযাত্রা বিশ্ব শ্রমিক দিবসে ইমারত নির্মাণ শ্রমিক ইউনিয়নের উদ্যোগে গৌরীপুরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা মহান মে দিবসে গৌরীপুরে জাতীয় শ্রমিক লীগের বর্ণিল শোভাযাত্রা অতি বাম আর অতি ডান মিলে সরকার উৎখাতে কাজ করছে: শেখ হাসিনা কৃষিবিদ ড. সামীউল আলম লিটনের আজ দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী গৌরীপুরে বিশ্ব নৃত্য দিবস পালিত
প্রধান প্রতিবেদক || দৈনিক বাহাদুর
  • প্রকাশিত সময় : ডিসেম্বর, ২০, ২০২২, ৪:৩৩ অপরাহ্ণ




সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব-প্রকৃতি হচ্ছে বিপন্ন! গৌরীপুরে জলবুরুঙ্গায় জলজটে ধুকছে!

ময়মনসিংহের গৌরীপুরের জলবুরুঙ্গায় এখন সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব আর দু’পাড়ের মানুষ ও জলবুরুঙ্গার প্রকৃতি এখন বিপন্ন হচ্ছে। মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে, জলজটে জলবুরুঙ্গা ধুকছে। বিস্তীর্ণ এলাকা কচুরিপানায় ভরে গেছে। কচুরিপানার জটে জলবুরুঙ্গার পানি দেখা যায় না। দূর থেকে দেখে মনে হয় সবুজের সমারোহ। দুই পাড়ে ময়লা-আবর্জনা ফেলায় দূষণ হচ্ছে পরিবেশ। এতে হুমকিতে পড়েছে মৎস্য প্রজাতি সহ জীববৈচিত্র। উজানে বাঁধ, ভাটায় দখল; মাঝে সেতু’র ফাইলিংয়ের ভরাট মাটি! ময়মনসিংহের গৌরীপুরের স্বচ্ছ পানির গভীর খর¯্রােতা জলবুরুঙ্গা নদীর গলাটিপে ধরেছে! ৩বছরের জন্য সর্বশেষ লীজ দেয়া হয় ১৩লাখ ২০হাজার টাকায়। বর্তমানে কেউ লীজ নিচ্ছে না, ফলে রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

স্থানীয়রা জানান, সরকারি তালিকায় জলবুরঙ্গা বিল। তবে এই অঞ্চলের মানুষের কাছে জলবুরুঙ্গা নদী হিসাবে পরিচিত। হিন্দু ধর্মালম্বীর পুণ্যার্থীরা এখানে ¯œান করে। অনেকে মঙ্গল কামনায় মানত করে জলবুরুঙ্গার পানিতে দুধ ঢালে। কিন্ত দখল, দূষণ ও কচুরিপানা জমে জলবুরুঙ্গা এখন মৃতপ্রায়।
উপজেলার অচিন্তপুর ইউনিয়নের গোপীনাথপুর ও সহনাটি ইউনিয়নের ভালুকাপুর গ্রামের সীমানা ভাগ করে প্রবাহমান জলবুরুঙ্গা। এর আয়তন প্রায় ২০ একর। রুই, কাতল, বোয়াল সহ দেশীয় প্রজাতির মাছের আধার খ্যাত জলবুরুঙ্গা ইজারা দিয়ে সরকার রাজস্ব আয় করতো। প্রায় ছয় বছর আগে থেকে জলবুরুঙ্গায় কচুরিপানা জমতে শুরু করে। কিন্ত ওই সময় প্রশাসন কিংবা ইজারাদার কচুরিপানা অপসারণ কোন উদ্যোগ নেয়নি। ফলে ধীরে ধীরে জলবুরুঙ্গা কচুরিপানার ভাগাড়ে পরিণত হয়।

দেড় কিলোমিটারে ১৯টি অবৈধ মাছ ধরার বাঁধ, অর্ধশত বাড়িঘর, ২২টি পুকুর আর সহ¯্রাধিক বৃক্ষরাজি জেগেছে এ নদীর পাড়ে। কেউ জলবুরুঙ্গার পাড় ভরাট করছে আর কেউ পাড়ের মাটি কেটে নিজের বাড়ি উঁচু করছে, শুধু ক্ষত-বিক্ষত হচ্ছে জলবুরুঙ্গা! জলবুরুঙ্গা দখল করে তৈরি করা হচ্ছে বীজতলা ও ফসলি জমির মাঠ। দেবতার পুজা হয় না এখন ¯œানঘাঁটে; জলের পবিত্রতা কচুরিপানার জমাটবাঁধা স্তুপের নিচে কালচে পচা দুর্গন্ধে ‘জলবুরুঙ্গা’ ধুকছে! জীব-বৈচিত্র্য ও মাছের অভরায়ণ্য ধ্বংস হয়ে গেছে।

স্থানীয় সার্ভেয়ার (জমি জরীপকারক) ধোপাজাঙ্গালিয়া গ্রামের নুর মোহাম্মদ ফকির জানান, ভূমি রেকর্ডে জলবুরুঙ্গা শুরু থেকে দৌলতাবাদ পর্যন্ত ১৩২ফুট প্রশস্থ, দৌলতাবাদ থেকে দৌলতাবাদ শেষ প্রান্ত পর্যন্ত ১৪৫ফুট প্রশস্থ, এরপরে ব্রিজের সামনে ও পিছনে ৫২ফুট প্রশস্থ রয়েছে। যার বাস্তব চিত্র ভিন্ন! অচিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জায়েদুর রহমান জানান, জলবুরুঙ্গা নদীর সঙ্গে দু’টি ইউনিয়নের লাখো মানুষের জীবনযাত্রা মিশ্রিত। পানির প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে ১৬টি গ্রামের মানুষ শুকনা মৌসুমে চর আর বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতার শিকার হবেন।

ছিলিমপুর গ্রামের ৭০উর্ধ্ব মো. কুবেদ আলী জানান, সু-বিশাল জলবুরুঙ্গায় এখন নৌকা চলে না। ট্রলার বা মালবাহী নৌকা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ২০বছর পূর্বে। এ নদীর সঙ্গে কাঁচামাটিয়া হয়ে ব্রহ্মপুত্রের রয়েছে সংযোগ। গোপীনাথপুর গ্রামের আবুল হাসিম বলেন, শ’শ মানুষ এ নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করতো। সরকার লীজ দিয়েই নদীর সর্বনাশ করেছে। তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে একই গ্রামের মো. ইব্রাহিম বলেন, সেতু হয়েছে মানুষের উপকারে আর মরণ হয়েছে জলবুরুঙ্গার। সেতুর নিচে ফাইলিংয়ের মাটি না কাটায় প্রায় ৪বছর যাবত পানি চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। কর¯্রােতা ¯্রােত নেই; নেই জলবুরুঙ্গায় জলজ উদ্ভিদের নাচানাচিও। এ নদীর সুস্বাদু পুঁটি মাছও মরে গেছে। জমাটবাঁধা কচুরিপানা শুধু মাছ নয়; এবার জলবুরুঙ্গা নদীকে গিলে খাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের গৌরীপুর উপজেলা প্রকৌশলী অসিত বরণ দেব বলেন, বাঁধ অপসাণে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সরজমিনে দেখা যায়, জলবুরুঙ্গা নদী থেকে ডয়াকা নদী প্রবাহের মাঝেপথে পাছার বাজার থেকে ভালুকাপুর সড়কের ব্রিজের সামনে নদীপথ সরু হয়ে গেছে। দৌলতাবাদ-যোগীডাংগুরী ব্রিজ ৩৬০মিটার হলেও ব্রিজের সামনের অংশে জলবুরুঙ্গা এখন মাত্র ২০/২৫ফুট বেঁচে আছে। জলবুরুঙ্গার সঙ্গে যুক্ত নালিগাঙ্গা ও তেলহিবিলের নানা প্রবাহ আটকে দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে দৌলতাবাদ গ্রামের আব্দুর রহমানের পুত্র মো. সোহেল মিয়া জানান, জলবুরুঙ্গাকে বাঁচাতে হলে অবৈধ দখলদারের উচ্ছেদ করে খালগুলো খনন দ্রæত প্রয়োজন। তিনি আরও জানান, জলবুরুঙ্গা নদী থেকে ট্রলার কাঁচামাটিয়া ভায়া সোহাগী ভায়া ঈশ^রগঞ্জ হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে গিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করতো। আজ সব অতীত! সহনাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সালেহ উদ্দিন কাদের রুবেল বলেন, এ নদীর সঙ্গে মানুষ, প্রাণী ও প্রকৃতির জীবন জড়িয়ে আছে। শুধু জলবুরুঙ্গার জন্য নয়; প্রকৃতিকে বাঁচাতে হলে জলবুরুঙ্গাকে তার আসল রূপে আনা প্রয়োজন।
অপরদিকে জলবুরুঙ্গার সঙ্গে যুক্ত বাদনাবাইদের খাল যার প্রস্থ ৩৮ফুট থেকে ৫৬ফুট। সেই খাল ঠিকে আছে মাত্র ৮-১০ফুট। অচিন্তপুর ইউনিয়নের ছিলিমপুর থেকে শুরু হয়ে গোপীনাথপুর ভায়া লংক্ষাখলা খাল ভায়া ডয়হা নদীতে মিশে যায় জলবুরুঙ্গা। এরমধ্যে দখলকারের রয়েছে ১৯টি পুকুর। যার সিংহভাগ জলবুরুঙ্গাকে দখলে নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। গোপীনাথপুর গ্রামের রমজান আলীর পুত্র আব্দুল মজিদ জানান, পানি চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কচুরিপানা আটকে গেছে। ২/৩বছরে কচুরিপানা জমাট বাঁধা এখন কেউ নদীতে নামতে পারছে না। দৌলতাবাদ গ্রামের হরমুজ আলীর পুত্র আব্দুস সাত্তার জানান, কচুরিপানার কারণে কেউ মাছ ধরতেও নদীতে নামতে পারছে না। মাছের অভরায়ণ্য ধ্বংস হয়ে গেছে। একই গ্রামের আবু সিদ্দিক জানান, তেলহিখাল থেকে লংক্ষাখোলা পর্যন্ত খালের দু’পাশে দখলদাররা ভরাট করে ফেলেছে। লংক্ষাখোলা খনন হলেও জলবুরুঙ্গার সংযোগ খাল খনন ছাড়া জলবুরুঙ্গাকে বাঁচানো সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে সহনাটী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি রুহিদাস আচার্য্য জানান, জলবুরুঙ্গার স্বচ্ছ পানির ¯্রােত ফিরিয়ে আনতে হলে দ্রæত কচুরিপানা পরিস্কার প্রয়োজন। জলবুরুঙ্গা ও তার সংযোগ খালগুলো খনন দরকার। সর্বশেষ খাস-কালেকশানে এ নদী লীজ নেন চিত্র নায়িকা জ্যাতিকা জ্যাতি। তিনি জানান, আমি দু’বছর লীজ নিয়েছিলাম। অনেক টাকার মাছধরার সরঞ্জামও কিনে ছিলাম। সেখানে মাছ ধরতে পারি নাই। আমার পুরোটাই লস হয়েছে।
জলবুরুঙ্গা নদী রক্ষা প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হাসান মারুফ বলেন, জলবুরুঙ্গা নদীতে অবৈধ দখলদারের উচ্ছেদে দ্রæত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে ইজারা বন্ধ আছে। এখন খাস কালেকশন করা হচ্ছে। কচুরিপানা অপসারণেও উদ্যোগ নেয়া হবে।

ba




Comments are closed.

     এই বিভাগের আরও খবর




অনলাইন জরিপ

জাতিসংঘের বিশেষ দূত এলিস ক্রুজ বলেছেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সব মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?

View Results

Loading ... Loading ...

পুরনো সংখ্যার নিউজ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
 
১০১১
১২১৩১৪১৫১৬১৭১৮
১৯২০২১২২২৩২৪২৫
২৬২৭২৮২৯৩০৩১